স্টাফ রিপোর্টার : সব ধরনের জ্বালানি তেলের দাম বেড়েছে। নতুন দাম কার্যকর হবে শুক্রবার দিবাগত রাত ১২টার (৬ আগস্ট) পর থেকে। ভোক্তা পর্যায়ে লিটারপ্রতি ডিজেল ১১৪ টাকা, কেরোসিন ১১৪ টাকা, অকটেন ১৩৫ টাকা এবং পেট্রোলের দাম ১৩০ টাকা নির্ধারণ করেছে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ।গতকাল শুক্রবার (৫ আগস্ট) রাত ১০টায় জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগ থেকে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
এদিকে রাত ১২ টার পর থেকেই জ্বালানি তেলের দাম বাড়তে চলেছে এমন খবরে সারা দেশের ন্যায় রাজশাহী জেলার ফিলিং স্টেশনগুলোতে বাইকারদের ভীড় লক্ষ্য করা গেছে। তেলের দাম বাড়ার খবরে অনেকেই জ্বালানি তেল নিতে হাজির হয়েছেন নিকটস্ত ফিলিং স্টেশনগুলোতে। আবারও অনেক ফিলিং স্টেশনগুলোতে তেল না পেয়ে ফিরে গেছেন ক্রেতারা। এছাড়াও রাজশাহী মহানগরীর তালাইমারী এলাকার নয়ন পেট্রোল পাম্পের সামনে তেল না পেয়ে রাস্ত্রা অবরোধ করে বিক্ষোভ করতে থাকে বাইক চালকেরা। পরে মতিহার থানা পুলিশ এসে নয়ন পেট্রলপাম্প কতৃপক্ষকে সরকারী ঘোষনা অনুযায়ী রাত্রি ১২টা পর্যন্ত আগের দামেই জ্বালানি তেল দিতে হবে বলে নির্দেশ দিলে বাইক চালকেরা পূর্বের দামেই জ্বালানি তেল নিয়েছেন।
পাম্প স্টেশনে ভিড় করা একজন ক্রেতা বলেন, রাত ১০ টা থেকে বিভিন্ন পাম্পে যাচ্ছি প্রতিটি পাম্পে ভিড়। অনেক পাম্প বন্ধ রাখা হয়েছিলো।
এদিকে, সর্বশেষ ২০২১ সালের ৪ নভেম্বর ডিজেল ও কেরোসিনের দাম বাড়ানো হয়। সেই সময় এই দুই জ্বালানির দাম লিটার প্রতি ৬৫ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৮০ টাকা করা হয়। ৮ মাসের ব্যবধানে আবার বাড়ানো হলো তেলের দাম। তবে ওই সময় পেট্রোল আর অকটেনের দাম অপরিবর্তিত রাখা হয়েছিল। এবার সব ধরনের জ্বালানি তেলেরই দাম বাড়ানো হলো।
এতে আজ শনিবার (৬ আগস্ট) থেকে লিটার প্রতি ডিজেল ৮০ টাকা থেকে ৩৪ টাকা বেড়ে ১১৪ টাকা, কেরোসিন ৩৪ টাকা বেড়ে ১১৪ টাকা, অকটেন ৪৬ টাকা বেড়ে ১৩৫ টাকা এবং পেট্রোল ৪৬ টাকা বাড়িয়ে ১৩০ টাকা দরে বিক্রি শুরু হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের উর্ধ্বগতির কারণে পার্শ্ববর্তী দেশসহ বিভিন্ন দেশে নিয়মিত তেলের মূল্য সমন্বয় করা হয়।
গত ২২ মে থেকে কলকাতায় ডিজেলের মূল্য প্রতি লিটার ৯২ দশমিক ৭৬ রুপি এবং পেট্রোল ১০৬ দশমিক ০৩ রুপি নির্ধারণ করেছে।
এই মূল্য বাংলাদেশি টাকায় যথাক্রমে ১১৪ দশমিক ০৯ টাকা এবং ১৩০.৪২ টাকা (১ রুপি = ১.২৩ টাকা ধরে)। অর্থাৎ বাংলাদেশে কলকাতার তুলনায় ডিজেলের মূল্য লিটার প্রতি ৩৪ দশমিক ০৯ এবং পেট্রোল লিটার প্রতি ৪৪ দশমিক ৪২ টাকা কমে বিক্রি হচ্ছিল। তাই সংশ্লিষ্টরা বলছেন, তেল পাচার হওয়ার আশঙ্কা থেকেও জ্বালানি তেলের মূল্য বাড়ানো ছিল সময়ের দাবি।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন বিগত ছয় মাসে (২২ ফেব্রুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত) জ্বালানি তেল বিক্রয়ে (সকল পণ্য) ৮০১৪ কোটি ৫১ লাখ টাকা লোকসান দিয়েছে। বর্তমানে, আন্তর্জাতিক তেলের বাজার পরিস্থিতির কারণে বিপিসির আমদানি কার্যক্রম স্বাভাবিক রাখতে যৌক্তিক মূল্য সমন্বয়ও অপরিহার্য হয়ে পড়েছিল।
এর আগে ২০১৬ সালের ২৪ এপ্রিল গেজেট প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে জ্বালানি তেলের দাম কমানো হয়েছিল। সেই সময় ডিজেলের দাম ৬৫ টাকা, কেরোসিনের দাম ৬৫ টাকা, অকটেনের দাম ৮৯ টাকা ও পেট্রোলের দাম ৮৬ টাকা নির্ধারণ করা হয়।
২০১৩ সালে আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে মূল্য সমন্বয়ের সময় বাংলাদেশে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানো হয়েছিল। তখন প্রতি লিটার অকটেন ৯৯ টাকা, পেট্রোল ৯৬ টাকা, কেরোসিন ও ডিজেল ৬৮ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছিল।
প্রসঙ্গত, গত সপ্তাহ থেকেই জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানো নিয়ে আলোচনা শুরু হয়। বিপিসি বারবার তাদের লোকসান কমাতে দাম বাড়ানোর প্রস্তাব দিতে চাইছিল জ্বালানি বিভাগে।
বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের মূল্য বাংলাদেশের তুলনায় অনেক বেশি হওয়ায় বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি), ইস্টার্ণ রিফাইনারি লিমিটেড (ইআরএল)-এ পরিশোধিত এবং আমদানি/ক্রয়কৃত ডিজেল, কেরোসিন, অকটেন ও পেট্রোলের মূল্য সমন্বয় করে ভোক্তা পর্যায়ে এই দাম পুনঃনির্ধারণ করা হলো।